.bangla { font-family: SolaimanLipi, Rupali, "Times New Roman", Serif, Vrinda; font-size: 15pt; }
Blogger Widgets

২৭ নভেম্বর, ২০১৫

সমগ্র বাংলাদেশ এক রুপি

0 comments

Dr Tuhin Malikএক. গত ৪ঠা নভেম্বর দৈনিক প্রথম আলো পত্রিকা আখাউড়া সীমান্ত পারাপারের সময় ভারতীয় পণ্যবাহী একটি ট্রাকের ছবি প্রকাশ করে। ছবিটির শিরোনাম ছিল ‘এক রুপিতে ট্রানজিট’। নিউজে বলা হয়, ‘পশ্চিমবঙ্গের কলকাতা থেকে একটি পণ্যবাহী ট্রাক সড়কপথে ঢাকা হয়ে ত্রিপুরার আগরতলা গেলো। মাশুল সম্পর্কে জানতে চাইলে আখাউড়া শুল্ক বিভাগের সহকারী কমিশনার মিহির কিরণ চাকমা বলেন, দুই দেশের সরকারের পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে পরীক্ষামূলকভাবে চালানে এক রুপি মাশুল নেয়া হয়। যেহেতু পণ্যগুলো বাংলাদেশের বাজারে প্রবেশ করেনি, তাই কোন শুল্ক নেয়া হয়নি।’ খবরটি নতুন হলেও এরকম ঘটনা অবশ্য নতুন কিছু নয়। কারণ গত চার বছরে ভারতকে বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে বেশ কয়েকবার বিনাশুল্কে পণ্য পরিবহনের সুযোগ করে দিয়েছি আমরা। ত্রিপুরার পালাটানা বিদ্যুতকেন্দ্রের ভারী যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে চালের একাধিক চালান ত্রিপুরায় পৌঁছাতে বাংলাদেশের ভেতর দিয়েই ভারতীয় ট্রাকগুলো হরহর করে চলেছে এত দিন। কখনও ভারতকে ‘মানবিক কারণ’ দেখিয়ে, কখনও বা ‘প্রতীকী মাশুল’ ধরে এই সুবিধাগুলো দেয়া হয়েছে। কিন্তু কলকাতা থেকে ১ হাজার ৫৫৯ কিলোমিটার দূরত্বের আগরতলায় এত দিন যে পণ্য পরিবহনে সময় লাগতো দীর্ঘ আট দিন, আমাদের ‘মানবিক কারণে’ এই দূরত্ব এখন প্রায় এক হাজার কিলোমিটার কমে মাত্র ৫১ ঘণ্টায় পৌঁছে যাচ্ছে আগরতলায়। বিনিময়ে আমাদের ভাগ্যে জুটলো মাত্র এক রুপি! অথচ আমরা চাতক পাখির মতো ভারতের কাছ থেকে ‘মানবিক কারণে’ এক ফোটা তিস্তার ন্যায্য জল পাই না! আমাদের সরকার টাকার অন্বেষণে শিক্ষার ওপর ভ্যাট বসালেও ভারতের কাছ থেকে ন্যায্য পাওনা আদায়ে ‘মানবিক’ হয়ে যায়। অথচ কদিন আগেও আমাদের মন্ত্রীরা বলে বেড়াতেন, ট্রানজিট দিলে বাংলাদেশের আয় বাড়বে। এ দেশ হবে সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া। আর বাস্তবে এখন হাজার হাজার কোটি টাকা আয় তো দূরের কথা, বিনা শুল্কে আর এক রুপিতে ট্রানজিট দিলাম আমরা। এ যেন ভারতীয় ট্রাকে এখন বাংলা হরফে লেখা ‘সমগ্র বাংলাদেশ এক রুপি।’
দুই. কদিন আগে দিল্লিতে ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে এসওপি সই হয়েছে। বাংলাদেশের পক্ষ থেকে ভারতকে নৌপরিবহন প্রটোকলের আওতায় প্রতি মেট্রিক টনের ট্রানজিট মাশুল বাবদ ১৩০ টাকা প্রদানের প্রস্তাব দেয়া হয়। অথচ ২০১০ সালে এনবিআর থেকে ট্রানজিটের মাশুল বাবদ বিশ ফুট কনটেইনারের জন্য ১০,০০০ টাকা এবং ট্রাকে টনপ্রতি ১০০০ টাকা ফি নির্ধারণের প্রস্তাব দেয়া হয়। এর প্রেক্ষাপটে এনবিআর থেকে তখন একটি এসআরও জারি পর্যন্ত করা হয়েছিল। কিন্তু সরকারি উচ্চমহলের ধমকে এই এসআরও তখন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হয় আমাদের এনবিআর। এরপর ২০১২ সালে এনবিআর থেকে এই মাশুল অর্ধেকের মতো কমিয়ে এনে টনপ্রতি ৫৮০ টাকার প্রস্তাব দেয়া হয়। এর মধ্যে স্ক্যানিংয়ের জন্য ৩০০ টাকা, ট্রানশিপমেন্ট বাবদ ২০ টাকা ও নথি প্রক্রিয়াকরণ বাবদ ১০ টাকাসহ আটটি খাতে এ টাকা ধরা হয়। এ ছাড়াও পণ্যের বিপরীতে ব্যাংক গ্যারান্টি দেয়ার কথাও তখন বলা হয়। কিন্তু এখন স্ক্যানিংয়ের জন্য কোন ফি বরাদ্দ রাখা হয়নি। তার মানে, স্ক্যানিং না করেই কি আমরা তাদের পণ্য আসা-যাওয়ার সুযোগ করে দিচ্ছি? আশ্চর্য, কার স্বার্থে কাদের পরামর্শে ৫৮০ টাকা প্রস্তাবের পরিবর্তে এখন প্রায় ৭৮ শতাংশ কমে ভারতকে ট্রানজিট দিতে যাচ্ছি আমরা। তার মানে প্রতি কেজিতে মাত্র ১৩ পয়সায় ট্রানজিট! বাংলাদেশের জনগণের ট্যাক্সের টাকায় রাস্তা নির্মাণ করে আর কোটি কোটি টাকা রক্ষণাবেক্ষণের খরচ জুগিয়ে ভারতকে নামমাত্র মূল্যে ভারী ভারী ট্রাক চলাচলের সুযোগ করে দিচ্ছি। আর মাশুল পাচ্ছি মাত্র এক রুপি! ভারত কি আমাদের নষ্ট রাস্তাগুলো নিজেদের টাকায় ঠিক করে দেবে? অথচ ভারত থেকে বাংলাদেশী কোন ব্যবসায়ী যদি সড়ক পথে পণ্য আমদানি করে তবে ভারতকে সড়ক কর বাবদ পণ্য মূল্যের ১৩ দশমিক ৫ শতাংশ হারে অতিরিক্ত মাশুল দিতে হয়। তাছাড়া সেলস ট্যাক্স তো সঙ্গে আছেই। বন্ধুত্বে সুবাদে প্রশ্ন জাগতেই পারে, বাংলাদেশের পণ্যও কি নেপালে কিংবা ভুটানে যেতে কেজিপ্রতি এই ১৩ পয়সাই নেয়া হবে? ভারতের সঙ্গে চুক্তি করার আগে নেপাল-ভুটানে আমাদের পণ্য পরিবহনের জন্যও একই রকমের ফি নির্ধারণ করাটা কি সঙ্গত ছিল না। তাছাড়া নৌপথের জন্য ভারত কত টাকা বিনিয়োগ করবে সেটাও চুক্তিতে উল্লেখ থাকাটা কী প্রয়োজন ছিল না। দুই দেশের সরকার বলছে, আন্তঃরাষ্ট্রীয় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নয়নের কথা। অথচ আমরা তো শুধু দেখছি, এই যোগাযোগ বলতে শুধুই ভারতের মূল ভূখণ্ডের সঙ্গে পূর্বের সাত রাজ্যের সহজতম যোগাযোগের উন্নয়ন। তাহলে আমাদেরটা কোথায় গেলো?
তিন. আসামের বিচ্ছিন্নতাবাদী সংগঠন উলফার প্রতিষ্ঠাতা সাধারণ সম্পাদক অনুপ চেটিয়াকে গভীর রাতে কালো কাচের আঁধারে জিপে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে ভারতীয় হাইকমিশনের হাতে তুলে দেয় বাংলাদেশ সরকার। সঙ্গে তার দুই সহযোগী লক্ষ্মী প্রসাদ গোস্বামী ও বাবুল শর্মাকেও হস্তান্তর করা হয়। এর আগে ২০০৯ সালে উলফার চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজাখোয়াসহ কয়েকজন শীর্ষ নেতাকেও ভারতের হাতে তুলে দেয়া হয়। যদিও আমাদের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী প্রথমে এ বিষয়টিকে স্বীকারই করতে চাননি। তবে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনুপ চেটিয়াকে ভারতের কাছে হস্তান্তরের বিষয়টি নিশ্চিত করলে আমাদের সরকার আর এটা অস্বীকার করতে পারেনি। আমাদের নূর হোসেনকে ফেরত দিতে ভারতীয় আদালতের নির্দেশ প্রয়োজন হলেও অনুপ চেটিয়াকে ফেরত পাঠাতে আমাদের আদালতের নির্দেশের প্রয়োজন পড়েনি কেন? আমাদের সংবিধান অনুযায়ী বাংলাদেশ সকল স্বাধীনতাকামী গোষ্ঠীকে সমর্থন দিতে অঙ্গীকারাবদ্ধ হলেও অনুপ চেটিয়ার বিষয়ে সংবিধানের এই বাণী নীরব থেকেছে কেন? ভারতের চোখে হয়তো অনুপ চেটিয়া একজন বিচ্ছিন্নতাবাদী। কিন্তু বিশ্বের কাছে অনুপ চেটিয়া স্বাধীনতাকামী একজন নেতা। অথচ আমরা নূর হোসেনের মতো একজন খুনি সন্ত্রাসীর বিনিময়ে এরকম একজন স্বাধীনতাকামী নেতাকে ভারতের হাতে তুলে দিলাম! কাতল দিয়ে পুটি পেলাম! সরকার হয়তো ভুলেই গেছে, আমরাও একদিন স্বাধীনতাকামী ছিলাম। অথচ এই আসামের মানুষরাই ১৯৭১ সালে আমাদের মুক্তিফৌজকে সর্বাত্মক সহযোগিতা ও আশ্রয় দিয়েছিল। চট্টগ্রামের বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা সন্তু লারমাকে কি ভারত সরকার বাংলাদেশের হাতে কখনও তুলে দিয়েছিল? ১৯৭১ সালে ভারত কি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের নেতাদের পাকিস্তানের হাতে তুলে দিয়েছিল? ভারতের তামিলনাড়ু রাজ্য যদি স্বাধীন হতো তবে ভেলুপিল্লাই প্রভাকরণই হতেন স্বাধীন তামিল রাষ্ট্রের প্রধান। কিন্তু তিনি আজ কেবলই একজন মৃত সন্ত্রাসী। আমরা কখনই চাই না আমাদের মাটি ব্যবহার করে কেউ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের নিরাপত্তায় বিঘ্ন ঘটাক। ভারতের শান্তি ও নিরাপত্তায় কোন রকমের হুমকি আমাদের মাটিতে করতে দেয়া যাবে না। তাছাড়া ভারতের মতো একটি বন্ধু প্রতিবেশী আমাদের শত্রু হতে যাবে কেন? আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধে ভারতের অবদান কখনই ভোলার মতো নয়। কিন্তু তাই বলে আমাদের জাতীয় স্বার্থে ও আমাদের ন্যায্য দাবি আদায়ে আমরা কারও কাছে তো দাসখত লিখে দিতে পারি না।
চার. বাংলাদেশের কাছ থেকে প্রত্যাশার পুরোটাই পেয়েছে ভারতীয়রা। বাংলাদেশের নিজ ভূখণ্ডের ভেতর জঙ্গি ও বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠীকে শক্তহাতে নির্মূল করেছি আমরা। তাদের মোস্ট ওয়ান্টেড উলফা নেতা অনুপ চেটিয়াকে ভারতের হাতে তুলে দিয়েছি। ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পরিবহনের সব দুয়ার খুলে দিয়েছি। বাংলাদেশের ওপর দিয়ে আগরতলা-কলকাতা বাস সার্ভিস চালু করেছি আমরা। শিলং-গোয়াহাটি বাস সার্ভিসও চালু করে দিয়েছি ভারতের স্বার্থেই। খুলনা-মংলা-কুলাউড়া-শাহবাজপুর থেকে রেল সার্ভিসও দিচ্ছি তাদের। আশুগঞ্জ বন্দরকে পোর্ট অব কল ঘোষণা করে সেখানে তাদের জন্য অবকাঠামো নির্মাণ করা হচ্ছে। ১৩ পয়সা কেজিতে নৌ ট্রানজিট পেতে যাচ্ছে তারা। আমাদের নদীতে বাঁধ দিয়ে ভারী যন্ত্রপাতি এক অংশ থেকে অন্য অংশে নিয়ে যাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছি। গত সোমবার ভারত নিজেদের জন্য তরলীকৃত পেট্রোলিয়াম গ্যাস (এলপিজি) আমদানি করতে আমাদের চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর ব্যবহার করার প্রস্তাব দিয়েছে। আমাদের পুঁজিবাজার সুরক্ষার নামে গত সপ্তাহে ভারতের সঙ্গে আমাদের পুঁজিবাজারের চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। দুদিন আগে প্রধানমন্ত্রী ঘোষণা দিলেন ভারতের সঙ্গে বন্ধ সব পথ খুলে দেয়ার জন্য। বিপরীতে নিজেদের টাকায় চড়ামূল্যে ভারত থেকে যে ৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেনার কথা ছিল তাও এখনও পুরোপুরি পাইনি আমরা। সঙ্গে শুধু আশ্বাসই পেয়েছি ভুঁরিভুঁরি। পাওয়ার ক্ষেত্রে আমরা শুধু পেলাম ১০০ কোটি ডলারের ঋণ। অথচ যেখানে হাজার হাজার কোটি টাকার রিজার্ভের কথা বলে আমরা বুক ফুলিয়ে বড়াই করি, সেখানে ১০০ কোটি ডলার ধার নিয়ে আমরা তাদের জন্যই অবকাঠামো তৈরী করে দিতে যাচ্ছি। আমাদের যে নদীর ওপর বাঁধ দিয়ে নদীকে মেরে ফেলা হয়েছে আজ সেই মৃত নদীপথেই তাদের নৌ ট্রানজিট দিচ্ছি। আমাদের অপ্রতুল ভাঙা রাস্তাগুলোকে ‘মানবতার স্বার্থে’ উন্মুক্ত করে দিলাম তাদের জন্যই। অপরদিকে ভারত প্রতিবেশীর ন্যায্য অধিকারকে গুরুত্ব না দিয়ে নিজেদের পাওয়াটাকেই বড় করে দেখেছে। আমরাও ভারতের সঙ্গে চুক্তি করার আগে তিস্তাসহ ৫৪টি অভিন্ন নদ-নদীর ন্যায্য হিস্যায় পানিবণ্টন এবং সীমান্ত হত্যাসহ সব সমস্যার সমাধান আদায় করে নিতে পারিনি। এগুলো আদায়ে আমাদের রাজনৈতিক দৈন্য প্রকট হয়ে দেখা দিয়েছে। ১৯৭৫ সালে ‘মাত্র ৪১ দিনের জন্য পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হবে’- বলে ফারাক্কা ব্যারেজ চালু করেছিল ভারত। ৪০ বছর পার হলেও এই পরীক্ষামূলক পানি প্রত্যাহার আজও চালুই রয়ে গেলো। এবার তিস্তার সঙ্গে জুড়ে দেয়া হলো ফেনী নদী ও মুহুরির চরের সমস্যার বিষয়টিকে। তিস্তার পানি পেতে হলে এখন ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও ত্রিপুরা এই দুই রাজ্যের মুখাপেক্ষীও হতে হবে আমাদেরকে।
পাঁচ. দেশে এখন কোন শক্তিরই অস্তিত্ব নেই যে জাতীয় স্বার্থে এগুলোর প্রতিবাদ করবে। তাহলে আমাদের জাতীয় স্বার্থের কথাগুলো বলবেটা কে? স্বাধীনতার বিপক্ষের শক্তি হয়ে যাওয়ার ভয়ে সবাই যেন জাতীয় স্বার্থে মুখ খুলতে নারাজ। ভারতের সঙ্গে আন্তঃরাষ্ট্রীয় কিংবা ভূ-রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট যা-ই থাকুক না কেন, জাতীয় স্বার্থের প্রশ্নে আমাদের জনগণের রয়েছে প্রচণ্ড আবেগ আর ন্যায্য অধিকার প্রাপ্তির প্রত্যাশা। ভারতকে আমরা বন্ধুই ভাবি। তবে ভারত আমাদের সমমর্যাদার ভিত্তিতে না দেখার কারণে জাতীয় মর্যাদার প্রশ্নে আমরা ভারতের কাছ থেকে বরাবর দুঃখটাই বেশি পেয়েছি। গত কয় বছরে আমরা ভারতকে যথেষ্ট দিয়েছি। কিন্তু ভারত আমাদের প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ হয়েছে। সেই ১৯৭২ সাল থেকেই তিস্তার পানিবণ্টন নিয়ে তারা আমাদেরকে মুলা ঝুলিয়ে রেখেছে। টিপাইমুখ বাঁধ নিয়েও তারা বারবার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে চলেছে। পদ্মায় আজ পানিশূন্যতা। পদ্মা ও তিস্তাপারের মানুষের অনিবার্য নিয়তি লাঘবে দুদেশের বন্ধুত্ব কোন কাজেই আসেনি। সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি। কাঁটাতারে ঝুলন্ত ফেলানীরা আজও ন্যায়বিচার পায়নি।
ছয়. ভারত-বাংলাদেশ বাণিজ্যে আকাশ-পাতাল ভারসাম্যহীনতা কেন কমছে না? শুল্ক-অশুল্ক বাধায় জর্জরিত আমাদের পণ্য ভারতের বাজারে ঢুকতে পারছে না কেন? বাংলাদেশী টিভি চ্যানেলগুলো পশ্চিমবঙ্গে পর্যন্ত দেখানোর অনুমতি নেই। ভারতীয় ভিসার জন্য অবর্ণনীয় দুর্ভোগের কোন সীমা নেই। আমাদের যুবসমাজের মাদক সেবনের রসদ সরবারহের জন্য পুরো সীমান্তজুড়ে ভারত তৈরি করে রেখেছে অজস্র ফেনসিডিলের কারখানা। ভারত বারবার বাংলাদেশী অনুপ্রবেশকারীদের কথা বললেও বর্তমানে ১৫ লাখেরও বেশি ভারতীয় অবৈধভাবে বাংলাদেশে অবস্থান করছে। অথচ ভারতের প্রবাসী আয়ের পঞ্চম বৃহত্তম অঙ্ক আয় করে বাংলাদেশ থেকেই। যুক্তরাজ্য ও বাংলাদেশ থেকে ভারতের প্রবাসী আয়ের পরিমাণ প্রায় সমান। এদিকে কোটি কোটি পাঠ্যপুস্তক ভারত থেকে ছাপিয়ে বিতরণ করছি আমরা। দেশের প্রকাশনা শিল্প এ নিয়ে কোন উচ্চবাচ্য করার সাহসই নাকি রাখে না। অথচ আমরা পুরো বাংলাদেশকে ভারতীয় পণ্যের বাজারে পরিণত করেছি। ভারতের কাছ থেকে বাংলাদেশ যে ২৫ ক্যাটাগরির পণ্য শুল্কের সুবিধা চাইছে এত দিন তা ভারত ট্রানজিট ও ট্রান্সশিপমেন্ট আদায়ের বেড়াজালে আবদ্ধ রাখলেও এখন আর সেগুলোর কোনো খবর নেই। উপরন্তু বাংলাদেশের ওপর দিয়ে ভারতের বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন এবং টেলিকমিউনিকেশন লাইন টানার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। বৃহৎ শক্তিশালী অর্থনীতির দেশ ভারতের রপ্তানির বড় বাজার হচ্ছে বাংলাদেশ। রপ্তানির পাশাপাশি ভারতের রয়েছে অবৈধ চোরাচালান বাণিজ্য। তার পরিমাণও বৈধ বাজারের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই অবৈধ বাণিজ্যের কারণেও বাংলাদেশ বৈধ শুল্ক থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। ভারতের মোট আমদানির ক্ষুদ্র এক অংশ (.০১%) আসে বাংলাদেশ থেকে। পক্ষান্তরে ভারত থেকে বাংলাদেশের মোট আমদানি হয় ১৫% শতাংশ। ভারতে তৈরী পোশাক রপ্তানির ক্ষেত্রে ভারত কাউন্টার ভেইরিং ডিউটি আরোপ করে রেখেছে। পাটের ব্যাগ রপ্তানিতে ‘কান্ট্রি অব অরিজিন’ লেখার বাধ্যবাধকতা জারি করে রেখেছে। ভারতীয় পণ্য বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করলেও ভারতের ভূখণ্ড ব্যবহার করে বাংলাদেশী পণ্য নেপাল ও ভুটানে ঢুকতে দেয়া যাচ্ছে না। যমুনা সেতুতে দেশের মানুষকে টোল দিতে হলেও টোল দিতে হয় না শুধু ভারতকে। নিজেদের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়েই আমরা বন্ধুত্বকে টিকিয়ে রেখেছি। অথচ বন্ধুত্বে দাবি দুই দিকেই সমান হতে হয়। একজনের বির্সজন আর আরেকজনের শুধুই অর্জন কখনও বন্ধুত্ব হতে পারে না।
সাত. সাবেক পূর্ব পাকিস্তানে, যা বর্তমানে বাংলাদেশ, কোন সমুদ্র বন্দর ছিল না। তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ছয় মাসের জন্য ভারত সরকারের কাছ থেকে কলকাতা বন্দর ব্যবহারের অনুমতি চেয়েছিল। ভারত সরকার তখন প্রত্যুত্তরে বলেছিল, ছয় মাস কেন, ছয় ঘণ্টার জন্যও কলকাতা বন্দর ব্যবহার করতে দেয়া হবে না। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান অর্থাৎ আজকের বাংলাদেশকে কলকাতা বন্দর ব্যবহারের সব প্রস্তাবকে তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করেছিল ভারত সরকার। অথচ সেই বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই ভারত সরকার চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দর ব্যবহার করার চেষ্টা চালিয়ে আসছে। এত দিন পর তারা এই সরকারের আমলে এসে সেটা অর্জন করলো। ভারতকে আমরা যেভাবে ট্রানজিট সুবিধা দিচ্ছি তা একমাত্র আফ্রিকান লেসোথো রাষ্ট্রের সঙ্গেই তুলনা করা যেতে পারে। যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা দিয়ে চারদিকে ঘেরাও হয়ে থাকা ক্ষুদ্র রাষ্ট্র লেসোথো সোনার খনির মালিক হয়েও আজ দক্ষিণ আফ্রিকার দশম প্রদেশ হওয়ার জন্য নিজেরাই আবেদন জানাচ্ছে।
লেখক: আইনজ্ঞ ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ
e-mail: drtuhinmalik@hotmail.com



via Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/1Nf0f3C
বিস্তারিত ...

মিডিয়ার স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে ইউরোপীয় পার্লামেন্টের আহ্বান

0 comments

Europian Unionগণমাধ্যমের পূর্ণাঙ্গ স্বাধীনতা ফিরিয়ে দিতে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। বন্ধ মিডিয়া হাউজগুলো অবিলম্বে খুলে দেয়া ও সরকারের সমালোচনামূলক লেখা প্রকাশের কারণে যেসব প্রকাশক, সাংবাদিকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়েছে তা প্রত্যাহারেরও আহ্বান জানানো হয়েছে। গতকাল ইউরোপীয় পার্লামেন্টে উত্থাপিত এক প্রস্তাবে এসব আহ্বান জানানো হয়। প্রস্তাবটি পাস হয় ৫৮৬ ভোটে। বিপক্ষে পড়ে ৩১ ভোট। অনুপস্থিত ছিলেন ২৫ জন। আলোচনায় গণতন্ত্র ও সকল রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে জাতীয় সংলাপের প্রয়োজনীয়তার বিষয়গুলো তুলে ধরেন বক্তারা। ‘বাংলাদেশে মত প্রকাশের স্বাধীনতা’ শীর্ষক আলোচনায় বক্তব্য রাখেন জিন ল্যাম্বার্ট, ইকনাজিও কোরাও, চার্লস ট্যানক, ক্রিশ্চিয়ান ড্যান প্রেদা, ডিটা চারানজোভা, পিয়ের অ্যান্টোনিও প্যানজেরি, লোলা সাঞ্চেজ ক্যালডেন্টি, শন কেলি, রিচার্ড হোয়িট, ক্যারোল কারস্কি, বৃট্রিজ বেকেরা বাস্তেরেকিয়া, লিন বয়লাম, ডায়ান জেমস, ল্যামপ্রোস ফাউন্টুলিস, নিনা গিল, মনিকা ম্যাকোভেই, জিরি পসপিসিল, নোটিস মারিয়াস, আইভান জ্যাকাভিচ, স্ট্যানিসলাভ পোলক্যাক ও ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা। শুনানিতে বক্তারা বলেন, ইউরোপের বাজারে শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত সুবিধা পায় বাংলাদেশ। তাই ইউরোপীয় ইউনিয়ন মত প্রকাশের স্বাধীনতার ইস্যু উত্থাপন অব্যাহত রাখবে। গণতন্ত্র ও সুশাসন জোরদার করতে প্রয়োজনীয় সংস্কারের জন্য বাংলাদেশকে সহায়তায় ইইউ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। পার্লামেন্টে উত্থাপিত প্রস্তাবের অন্যতম লেখক জিন ল্যাম্বার্ট বলেন, আমরা প্রত্যাশা করবো যারা বাংলাদেশে ঝুঁকির মুখে রয়েছে, তাদের রক্ষায় ব্যবস্থা গ্রহণ করবে সরকার। আর একই সুবিধা দেবে রাজনৈতিক বিরোধীদেরও। কেননা, তারাও বিভিন্নভাবে হামলার সম্মুখীন হয়েছে। তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য রাজনৈতিক সমঝোতার প্রয়োজন রয়েছে। নিনা গিল বলেন, মিডিয়ার কণ্ঠরোধ, সোশ্যাল মিডিয়ার ওপর অভিযান, ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তি ও বিরোধীদের ওপর হামলা এবং অনলাইন প্ল্যাটফর্মগুলো বন্ধ করে দেয়ার ঘটনাগুলো দমন-পীড়নের স্পষ্ট সংকেত। উদ্বেগের বিষয় হলো সহিংসতা আসছে দুই দিক থেকে- কট্টরপন্থি সংগঠন এবং নিরাপত্তা বাহিনীগুলো। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আমার বার্তা হলো, উগ্রপন্থি সহিংসতা থেকে একটি সমাজকে রক্ষা করার জন্য সকলের অংশগ্রহণ, গণতন্ত্র, মানবাধিকারের প্রতি সম্মান এবং মত প্রকাশের স্বাধীনতার থেকে উত্তম কোন অস্ত্র নেই। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ সরকারকে আমি এ বার্তায় সত্যিকার অর্থে কর্ণপাত করার আহ্বান জানাই। আমি জানি, ‘জিরো টলারেন্স’ নীতিতে মানবাধিকার রক্ষায় উল্লেখ্যযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। কিন্তু সত্যিকার অর্থে এসব পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করা প্রয়োজন। আর আমি এ কমিশনের উচ্চ প্রতিনিধিদের প্রতি আহ্বান জানাই, এসব প্রচেষ্টায় বাংলাদেশকে সহায়তা করার জন্য। একই সঙ্গে দেশটিতে সব গণতান্ত্রিক দল এবং সুশীলসমাজের অংশগ্রহণে একটি জাতীয় সংলাপ প্রয়োজন। রিটা চারানজোভা বলেন, বাংলাদেশসহ গণতান্ত্রিক সব দেশে মতপ্রকাশ ও বাকস্বাধীনতা মৌলিক অধিকার। বাংলাদেশের সংবিধানের ৩৯ নম্বর অনুচ্ছেদে এর নিশ্চয়তা দেয়া হয়েছে। এতে এ-ও বলা আছে যে, শুধু যৌক্তিক কারণে স্বাধীনতায় বিধিনিষেধ আরোপ করা যাবে। রিচার্ড হোয়িট বলেন, সমালোচনাকে সরকার ক্রিমিনালাইজ করেছে। আইসিটির ৫৭ ধারায় ধর্ম নিয়ে সমালোচনা ও মানবাধিকার লঙ্ঘন বিষয়ক রিপোর্টিং ক্রিমিনাইজ করা হয়েছে। লিন বয়লান বলেন, এ বছর ৫ জন ধর্মনিরপেক্ষ ব্যক্তিকে হত্যা করা হয়েছে। এমন ভীতি প্রদর্শন ও ভবিষ্যৎ সহিংসতার হুমকি দ্রুতই বাংলাদেশের মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে নিঃশেষ করে দিচ্ছে। অনেক লেখক এমন হুমকিতে হয়তো দেশ ছেড়ে পালিয়েছেন, না হয় আত্মগোপনে আছেন। এটা অগ্রহণযোগ্য। বক্তারা আরও বলেন, বাংলাদেশে সম্প্রতি বেশ কিছু হত্যা ও সহিংসতা সংঘটিত হয়েছে ব্লগার, সাংবাদিক, মানবাধিকার কর্মীদের ওপর। এগুলো পরিষ্কারভাবে সন্ত্রাস। এগুলো তীব্র নিন্দাযোগ্য। ধর্মনিরপেক্ষ বাংলাদেশের ভঙ্গুর গণতন্ত্রকে অস্থিতিশীল করার অংশ এগুলো। আমরা ইউরোপে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমাদের অর্থনীতি সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও আমরা দেখতে পাচ্ছি এ লড়াই কতটা কঠিন। তাই যখনই আমরা বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনা করতে যাবো, সমালোচনা করবো তখন এটা আমাদের স্মরণে থাকা উচিত। পার্লামেন্টের আরেক সদস্য বলেন, বাংলাদেশে দায়েশ বা আইসিসের হুমকি রয়েছে। সরকারের উচিত সব সাংবাদিককে যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। আরেক বক্তা বলেন, ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশীদার হলো বাংলাদেশ। তবে দেশটি অবশ্যই মানবাধিকারের উদাহরণ নয়। এ বছর সেখানে ৫ জন ব্লগার, সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে। অপর এক বক্তা বলেন, মতপ্রকাশের স্বাধীনতা ও সংবাদ মাধ্যমের স্বাধীনতা হলো গণতন্ত্রের অংশ। এর ওপর ইসলামপন্থিরাই শুধু আক্রমণ করছে তা নয়। একই সঙ্গে সরকারও একই কাজ করছে। এ বিষয়টি বাংলাদেশের কর্মকর্তাদের সঙ্গে প্রতিটি আলোচনায় তুলে ধরতে হবে। আরেক এমপি বলেন, সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রত্যাহার করতে হবে। ফিরিয়ে দিতে হবে গণমাধ্যমের স্বাধীনতা। অপর এক বক্তা বলেন, গুম হয়ে যাওয়া বিরোধী দলের সদস্যদের অবস্থা সম্পর্কে আমাদের ব্যাখ্যা জানা প্রয়োজন। আমরা এসব গুমের ঘটনার তদন্ত দাবি করছি।
ওদিকে, পার্লামেন্টে যে প্রস্তাবটি (জঈ-ই৮-১২৫৭/২০১৫) উত্থাপিত হয়েছে তাতে বলা হয়েছে, সাংবাদিক, সুশীলসমাজ ও মানবাধিকার কর্মীরা যাতে নিরাপদে মত প্রকাশ করতে পারেন তা নিশ্চিত করা রাষ্ট্রের কর্তব্য। এতে নতুন মিডিয়া আইন বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে, যে নীতির অধীনে দেশের মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে বাংলাদেশ সরকার। একই সঙ্গে নতুন মিডিয়া নীতি পর্যালোচনার যে উদ্যোগ সরকার নিয়েছে তাকে স্বাগত জানানো হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, রাজিব হায়দার, অভিজিত রায়, ওয়াশিকুর রহমান, অনন্ত বিজয় দাস, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায়, ফরসাল আরেফিন দীপনসহ এ বছরে ব্লগার, মানবাধিকার কর্মী, প্রকাশকদের ওপর ভয়াবহ হামলা হয়েছে। এর মধ্যে কিছু হামলায় অনেকে আহত হয়ে বেঁচে আছেন। আরও অনেক লেখক ও প্রকাশককে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। এ বছরেই ইতালির নাগরিক সিজার তাভেলা, জাপানি কুনিও হোশিসহ বিদেশী নাগরিকদের হত্যা করা হয়েছে। কয়েকজন আহত হয়েছেন কট্টরপন্থিদের হাতে। ভয়াবহ হামলার মুখোমুখি হয়েছেন শিয়া মুসলিম, হিন্দু ও খ্রিস্টানসহ ধর্মীয় সংখ্যালঘুরা। ২৪শে অক্টোবর বোমা হামলা হয়েছে শিয়াদের একটি র‌্যালিতে। এতে এক কিশোর নিহত হয়েছে। এ বছর ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়কার অপরাধে জড়িত ইসলামপন্থি নেতাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ অপরাধের বিচার হয়। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দেখা দেয় সহিংসতা। হাজার হাজার মানুষ ওইসব ব্যক্তির সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি জানায়। বাংলাদেশের সঙ্গে দীর্ঘদিন সুসম্পর্ক রয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের। এর মধ্যে রয়েছে অংশীদারি ও উন্নয়নমূলক সহযোগিতা চুক্তি। বিদেশী কিছু গোয়েন্দা বিষয়ক এজেন্সি বলেছে বাংলাদেশে সক্রিয় ইসলামিক স্টেট ও আল কায়েদা। এ ছাড়া এখানে রয়েছে অভ্যন্তরীণ কট্টরপন্থিদের সমস্যা। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি অনুষ্ঠিত হয় জাতীয় নির্বাচন। ওই নির্বাচন বর্জন করে প্রধান বিরোধী দল বিএনপি। এ নির্বাচনে বিএনপির হরতাল ও তার ফলে সহিংসতা ছায়া ফেলেছে। তবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ সরকার জনঅধিকার সীমিত করার বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। ২০১৪ সালের জুলাইয়ে বাংলাদেশে সরকার একটি আইন প্রস্তাব করে। এর নাম ফরেন ডোনেশনস (ভলান্টারি এক্টিভিটিজ) রেগুলেশন অ্যাক্ট। এর ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়। আগস্টে বাংলাদেশ সরকার নতুন মিডিয়া নীতি প্রয়োগ করা শুরু করে। এতে মিডিয়ার স্বাধীনতা সীমিত করার নীতি আরোপ করা হয়। উদাহরণ স্বরূপ বলা যায়, রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যায় এমন বক্তব্য নিষিদ্ধ করা হয়। জাতীয় আদর্শের বিরুদ্ধে যায় তাও নিষিদ্ধ করা হয়। নৈরাজ্য, বিদ্রোহ অথবা সহিংসতার ওপর রিপোর্টিং করার ক্ষেত্রে সীমাবদ্ধতা দেয়া হয়েছে। গত কয়েক মাসে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তথ্য প্রযুক্তি আইন লঙ্ঘনের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। ওই প্রস্তাবে জঙ্গি হামলার তীব্র নিন্দা জানানো হয়। এসব হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের ও তাদের পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করা হয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সুপারিশে বলা হয়, বহু মতের পক্ষে, ইসলামপন্থিদের হত্যাকাণ্ডের বিরুদ্ধে ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র, জিহাদি গ্রুপের বিরুদ্ধে অবস্থানের জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছে ইউরোপীয় পার্লামেন্ট। এতে সব রাজনৈতিক দল, তাদের নেতাদের ঐকবদ্ধভাবে অবস্থান নিতে আহ্বান জানানো হয়। আহ্বান জানানো হয় মুক্তমত প্রকাশকে সমর্থন দিতে। দোষীদের বিচারের আওতায় এনে আরও হত্যাকাণ্ড প্রতিরোধের জন্য আহ্বান জানানো হয়েছে বাংলাদেশ সরকারের প্রতি। লেখক, প্রকাশক ও অন্য যাদের হুমকি দেয়া হয়েছে তাদের রক্ষা করতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে। অতিরিক্ত পুলিশ চেকপোস্ট বসিয়ে নিরাপত্তা রক্ষায় সরকারের পদক্ষেপকে স্বাগত জানানো হয়েছে। পুলিশ বাহিনী ও অন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে শক্তিশালী করায় সাধুবাদ জানানো হয়েছে। লেখক, অনলাইন ব্লগারদের ওপর হামলা ও হত্যার তদন্তে অগ্রগতি নিশ্চিত করতে হবে। এরই মধ্যে অভিজিত রায় হত্যায় জড়িত থাকায় আটক করা হয়েছে আট জনকে। ওয়াশিকুর বাবুকে হত্যায় দুজনকে, নীলাদ্রি চট্টোপাধ্যায় হত্যায় চারজনকে আটক করা হয়েছে। এতে বলা হয়, সাংবাদিক, সুশীলসমাজ ও মানবাধিকার কর্মীদের মুক্তমত প্রকাশ নিশ্চিত করার দায়িত্ব রাষ্ট্রের। এতে বলা হয়, বাংলাদেশ সরকার সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে অনেকটা অগ্রগতি করেছে। এতে লাখ লাখ মানুষের বাস্তব জীবন উন্নত হয়েছে। স্বীকার করে নিতে হয়েছে, দেশের অভ্যন্তরীণ জটিল পরিস্থিতিতে এ উন্নয়ন হয়েছে। ওই প্রস্তাবে বাংলাদেশের পার্লামেন্টের প্রতি আহ্বান জানানো হয়, নতুন মিডিয়া আইন নিয়ে নিরপেক্ষ গ্রুপগুলোর সঙ্গে পরামর্শ করতে এবং নিশ্চিত করতে যে, যদি এটা গৃহীত হয় তাহলে তা আন্তর্জাতিক মানদণ্ড বজায় রাখবে, যেসব অধিকার সুরক্ষিত রাখার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। সাইবার সিকিউরিটি অ্যাক্ট ২০১৫ বাস্তবায়িত হলে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। যদি এটা বাস্তবায়িত হয় তাহলে বিকল্প দৃষ্টিভক্তির ওপর কর্তৃত্বপরায়ণ শক্তি কঠোর হবে। ইতালিয়ান নাগরিক সিজার তাভেলা ও জাপানি নাগরিক কুনিও হোশি হত্যাকাণ্ডের তদন্তে বাংলাদেশকে স্বাগত জানানো হয়েছে। বলা হয়েছে, দুটি হত্যাকাণ্ডেই গ্রেপ্তার করা হয়েছে কয়েকজনকে। এখনও অনুসন্ধান চলছে। জাতিগত ও ধর্মীয় উদ্দেশে সহিংসতায় উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। ধর্মীয় সংগঠন, তাদের নেতা ও বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে পুনর্জাগরণের। এসব সহিংসতায় যারা জড়িত তাদেরকে বিচারের আওতায় আনতে বলা হয়েছে সরকারকে। শিয়া মুসলিম, হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান সহ অন্য সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার আহ্বান জানানো হয়েছে।



via Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/1LCtUOL
বিস্তারিত ...

মসজিদে হামলাকারীরা প্রকৃত মুসলমান নয়: শেখ হাসিনা

0 comments

Hasinaডেস্ক রিপোর্টঃ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, “মসজিদে নামাজের সময় মানুষ খুন করা কোনো সাচ্চা মুসলমানের কাজ না। যারা মসজিদে হামলা চালাচ্ছে তারা প্রকৃত মুসলমান নয়।’’
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গণভবনে আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদ ও পার্লামেন্টারি বোর্ডের বৈঠকের উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি এ মন্তব্য করেন। প্রধানমন্ত্রী বলেছেন,“সন্ত্রাসী পথ কোনো সত্যিকার সাচ্চা মুসলমানের কাজ না। যারা ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালাচ্ছে, তারা বিকৃত মানসিকতার।”
এই ধরনের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বিশ্বে মুসলমানদের জীবন দুর্বিষহ করে তুলবে বলেও আওয়ামী লীগ সভানেত্রী আশঙ্কা প্রকাশ করেন। আত্মহত্যা ইসলাম ধর্মে পাপ-তা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “মসজিদে গিয়ে সুইসাইডাল বোমা হামলা- এটা কী ভাবে করে? ধর্মের নামে মানুষ হত্যা করে, আত্মহত্যা করে ইসলাম ধর্মের মর্যাদা ক্ষুণ্ন করছে। এতে বিশ্বে মুসলমানদের জীবনযাত্রা অতিষ্ঠ করে তুলছে।”
ধর্মের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো ব্যক্তিদের ‘উন্মাদ’ আচরণ ইসলামের বদনাম করছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি। ইসলামের নামে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানোর ফলে সুযোগটা কে নিচ্ছে- প্রশ্ন রেখে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “যারা আমাদের স্বাধীনতার সমর্থন করে নাই, যারা হানাদার বাহিনীকে সহায়তা করেছিল, তারা একে অপরে মিলে দেশকে (বাংলাদেশ) ধ্বংসের দিকে নেওয়ার চেষ্টা করছে।”
গণভবনে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের ঠিক আগ মুহূর্তে বগুড়ার শিবগঞ্জে শিয়া মুসলিমদের একটি মসজিদে দুর্বৃত্তরা হামলা চালিয়ে মুয়াজ্জিনকে হত্যা করে, গুলিতে আহত হন ইমামসহ তিনজন। এ ছাড়া আরও অনেকে আহত হয়।



via Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/1XjxGsy
বিস্তারিত ...

তামিমদের উড়িয়ে দিয়ে ঢাকার সহজ জয় (ভিডিও)

0 comments

58507ডেস্ক রিপোর্টঃ মাত্র ৯২ রান নিয়ে কি লড়াই করা যায়? চিটাগং কিংসের বোলাররা এত অল্প পুঁজি নিয়ে একদমই লড়াই করতে পারলেন না। আর তাই ঢাকা ডায়নামাইটসের কাছে বিধ্বস্ত তামিমের দল। বৃহস্পতিবার বিপিএলের দ্বিতীয় ম্যাচে নাসির-মুস্তাফিজ-সাঙ্গাকারাদের দল জিতেছে অতি সহজে, ছয় উইকেটে। তৃতীয় ম্যাচে ঢাকা ডায়নামাইটসের এটা দ্বিতীয় জয়। অন্যদিকে চতুর্থ ম্যাচে চট্টগ্রামের দলটির তৃতীয় হার।
শাদমান ইসলামের বয়স ২০ বছর। সৈকত আলী তাঁর চেয়ে এক বছরের বড়। দুজনের কারোরই এখনো জাতীয় দলে খেলার সৌভাগ্য হয়নি। তবে অনভিজ্ঞতাকে পাত্তা না দিয়ে দুজনই খেলেছেন নির্ভিক চিত্তে।
মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে দুই ওপেনার শাদমান আর সৈকতের আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে ছয় ওভারে ৪৫ রানের উদ্বোধনী জুটি পেয়ে গেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। ফিল্ডিংয়ের সীমাবদ্ধতা কেটে যাওয়ার পরই অবশ্য প্রথম সাফল্য পেয়েছে চিটাগং ভাইকিংস। সপ্তম ওভারের প্রথম বলে শফিউল ইসলামকে তুলে মারতে গিয়ে জিয়াউর রহমানের হাতে ধরা পড়েছেন সৈকত। তাঁর ১৭ বলে ২৩ রানের আক্রমণাত্মক ইনিংসটা গড়ে উঠেছে দুটি চার ও একটি ছক্কায়।
সৈকতের বিদায়ের পর অন্য ওপেনার শাদমানের সঙ্গে জুটি বেঁধেছেন পাকিস্তানের নাসির জামশেদ। দুই বাঁহাতির দৃঢ়তায় জয়ের পথে এগিয়ে গেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। জামশেদ (১২) অবশ্য জয় নিয়ে মাঠ থেকে ফিরতে পারেননি। নাঈম ইসলামের বলে ছক্কা হাঁকাতে গিয়ে লং-অফে ক্যাচ দিয়েছেন জিয়াউরকে। নিজের পরের ওভারে নাসির হোসেনকেও (২) বোল্ড করেছেন নাঈম।
তবে তাতে ঢাকা ডায়নামাইটসের জয় আটকায়নি। ৪৭ বলে ছয়টি চারসহ ৪৫ রান করা শাদমানকেও নাঈম বোল্ড করলেও ১৭ বল হাতে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছে গেছে ঢাকার দলটি।
তিন ওভার বল করে মাত্র সাত রানের বিনিময়ে তিন উইকেট নিলেও চিটাগং ভাইকিংসের আরেকটি হার ঠেকাতে পারেননি নাঈম।



via Sylhet News | সুরমা টাইমস http://ift.tt/1QJSdSY
বিস্তারিত ...
 

সাম্প্রতিক সংবাদ

সর্বাধিক পঠিত

সাম্প্রতিক সংবাদ

সম্পাদক ও প্রকাশকঃ এস,এম, জহুরুল ইসলাম, দৈনিক সিলেট ভুমি কার্যালয়:- ইদ্রিছ মার্কেট-১৪/২,সিলেট-৩১০০ থেকে প্রকাশিত। Email: sylhetbhumi2013@gmail.com, Mobile: 01714-674551, .সর্ব স্বত্ব সংরক্ষিতঃ দৈনিক সিলেট ভুমি-২০১৩।> Copyright ©> Sylhet News-Sylhet Bhumi Design by DINAR-01717092424 | Theme by Sylhet Bhumi | Powered by Sylhet Bhumi